টানা বৃষ্টিতে পানিতে ভাসছে পর্যটন নগর কক্সবাজার। ডুবে গেছে শহরের প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা। এতে আটকা পড়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেলের ২০ হাজারেরও অধিক পর্যটক। জলাবদ্ধতার কারণে কোথাও বের হতে পারছেন না তারা। এমন ভারী বর্ষণ গত ৫০ বছরে দেখেননি কক্সবাজারের স্থায়ী বাসিন্দাদের কেউ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীরা জানায়, বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হলেও ভারী বর্ষণ শুরু হয় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে। এরপর রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টার ভারী বর্ষণ মানুষের কর্মজীবন অনেকটাই থামিয়ে দেয়।
প্রধান সড়ক ও সৈকত সড়কসহ শহরের কলাতলী, সুগন্ধা, বাজারঘাটা, বড়বাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়ার হাজারো ঘরবাড়ি, দোকান, অফিস-আদালত ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যায়।
প্রধান ও সৈকত সড়কসহ অন্তত ৩৫টি উপসড়ক ডুবে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে হাজারো ঘরবাড়ি। সড়কে যানবাহন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন।
সৈকত সড়কের বাসিন্দা মিজান জানান, কক্সবাজার শহরে এমন জলাবদ্ধতা গত ৫০ বছরেও কেউ দেখেনি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পৌরসভার মেয়রসহ অধিকাংশ কাউন্সিলর আত্মগোপনে চলে যান। শহরের ময়লা-আবর্জনায় নালা-নর্দমা ভরে আছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানি নালা দিয়ে নেমে যেতে পারছে না বলেই শহরজুড়ে এমন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে, ভারী বর্ষণের কারণে জেলার অধিকাংশ পাহাড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় ভূমিধসের ঘটনাও ঘটছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে সদরের ঝিলংজা দক্ষিণ ডিককুল এলাকায় পাহাড় ধসে স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমানের পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন মিজানের স্ত্রী আঁখি মণি (২৮), মেয়ে মিহা জান্নাত (১২) ও লতিফা ইসলাম (৯)। পাহাড়ের পাদদেশে মিজানের বাড়ি অবস্থিত হওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে, উখিয়া ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে তিনটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-২ ব্লকের কবির আহমেদের ছেলে আব্দুর রহিম, আব্দুল হাফেজ এবং আব্দুল ওয়াহেদ।
কক্সবাজার ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণে উখিয়া ১৪ নম্বর হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে তিনটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা বিধ্বস্ত ঘর বাড়িতে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টা থেকে শুক্রবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত কক্সবাজারে ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড। আরও কয়েক দিন ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান তিনি। এ অবস্থায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত বলবৎ রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, শুক্রবার সকালে ঝিলংজায় ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত তিনজনের পরিবারকে ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনা হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চারটি পৃথক টিম মাঠে নেমেছে৷