তীব্র গরম আর ঘনঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন। কোথাও কোথাও ১০-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে। বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। রাজধানী ঢাকাতেও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে এ বিদ্যুৎবিভ্রাট। লোডশেডিংয়ের কারণে সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছে বয়স্ক ও শিশুরা। সেপ্টেম্বরজুড়ে থাকতে পারে এমন অবস্থা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। জ্বালানি সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে লোডশেডিংয়ের ধকলে পড়েছেন মানুষজন। লোডশেডিংয়ের জন্য সামিট পাওয়ার ও ভারতের আদানি পাওয়ার, এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং পুকুরিয়া, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন হ্রাসকে দায়ী করা হচ্ছে। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে এবং দ্রুত সমাধানে সরকারের সংশ্লিষ্টরা কাজও শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। লোডশেডিংয়ের কারণ : বিদ্যুৎ সংকটের মূল কারণ জ্বালানির অভাব। অন্তত ৫৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ধুঁকছে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের সংকটে। কয়লার অভাবে ঝুঁকিতে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। উৎপাদন কমেছে আদানির। আর যান্ত্রিক ত্রুটি ও কারিগরি সমস্যায় বন্ধ বড়পুকুরিয়া, রামপালের প্রথম ইউনিটসহ ৪১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। তিন মাস ধরে রক্ষণাবেক্ষণে থাকা সামিটের এলএনজি টার্মিনাল তীব্র করেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের অভাব। সংকট কমাতে ভাসমান এ টার্মিনালের উৎপাদনে ফেরার অপেক্ষায় বিদ্যুৎ বিভাগ। ঢাকার লোডশেডিং পরিস্থিতি : ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, বুধবার দিনের বেলাতেও ডেসকো এলাকায় ১৫০ মেগাওয়াট ও ডিপিডিসি এলাকায় ২০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। ফলে রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় এক ঘণ্টা আর কোথাও দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং হয়েছে। গ্রামে লোডশেডিং বেশি : লোডশেডিং বেশি হচ্ছে দেশের অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) তথ্য অনুযায়ী, বুধবার দিনের বেলায় তিনটার দিকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯২ মেগাওয়াট লোডশেডিং করেছে তারা। গড়ে ২৫ শতাংশ সরবরাহ কম পেয়েছে আরইবি। আরইবি ঢাকা শহরের বাইরে ঢাকা জেলার সব গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বুধবার ৩৩ শতাংশ সরবরাহ ঘাটতি ছিল। কুমিল্লা এলাকায় সরবরাহ ঘাটতি ছিল ৩৪ শতাংশ। ময়মনসিংহ অঞ্চলে এটি ছিল ৩৩ শতাংশ। এর বাইরে রাজশাহী ২৭ শতাংশ, রংপুর ও সিলেটে ১৯ শতাংশ করে, চট্টগ্রামে ৬ শতাংশ ও বরিশালে ১ শতাংশ বিদ্যুৎ–ঘাটতি ছিল। সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন : বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, বড়পুকুরিয়ায় কারিগরি সমস্যা হয়েছে যা দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে; রামপাল পুনরায় চালু হয়েছে; আদানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং দ্রুত গ্যাস আমদানি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থার উন্নতি হবে। জানা গেছে, গত প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে সামিটের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনালটি বন্ধ। এতে প্রতিদিন গড়ে ১২০০ মেগাওয়াটের মতো কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অন্যদিকে বকেয়ার কারণে ভারতের আদানি গ্রুপ প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়েছিল। এর সঙ্গে কারিগরি কারণে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ এবং মাতারবাড়ি ও এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন কমে যাওয়ায় দেশে লোডশেডিং তীব্র আকার ধারণ করে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৮৫০ থেকে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কমে গিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ১৪ থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াটেই ঘুরপাক খাচ্ছে বিদ্যুৎ চাহিদা। তারপরও কখনো কখনো লোডশেডিং ছাড়াচ্ছে দুই হাজার মেগাওয়াটে।