সংকট কাটাতে আর্থিক সহায়তা চায় গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক

0

পি কে হালদারের সহযোগিতায় অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা ঋণের নামে নিয়ে গেছেন প্রভাবশালীরা। এখন ফেরত দিচ্ছেন না, আবার অনেক ঋণগ্রহীতাকে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তীব্র আর্থিক সংকটে পড়েছে দীর্ঘদিন এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এমন অবস্থায় আমানতকারীদের অর্থসহ নিজস্ব অনেক দায়-দেনাও পরিশোধ করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। তারল্য সংকট থেকে উত্তরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে শরীয়াহ ধারায় পরিচালিত ব্যাংকটি।

মঙ্গলবার গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়ে এ আর্থিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা তারল্য সহায়তা চেয়েছে ব্যাংকটি।

আর্থিক সহায়তা চাওয়া বিষয়টি স্বীকার করে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে আর কোনো ব্যাংকে তারল্য সহায়তা দেবে না। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী আন্তঃব্যাংকের মাধ্যমে অর্থাৎ এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে টাকা আমানত হিসেবে পাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) দেবে; এই প্রক্রিয়াটি প্রস্তুত করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এখন আমাদের আমানতকারীদের একটা চাপ রয়েছে, বিল পরিশোধ করতে পারছি না, এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠানের অর্থও দেওয়া যাচ্ছে না, এমন পরিস্থিতিতে কিছু অর্থ সহায়তা চাওয়া হয়েছে, প্রয়োজন আরও অনেক বেশি। যে অর্থ চাওয়া হয়েছে তা দিয়ে শুধু আমানতকারী ও পাওনাদারদের বিল পরিশোধ হবে।

এদিকে শুধু গ্লোবাল ইসলামী নয়, এস আলমের দখলে থাকা শরীয়াহ ধারার অধিকাংশ ব্যাংক দৈনিক আর্থিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে। তারল্য সংকট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদ সহায়তা বন্ধের কারণে চাহিদামত গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছে না ডজনখানেক বাণিজ্যিক ব্যাংক। তাই ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোতে ধার নিতে হলে বন্ড অথবা যে কোনো সম্পদ জামানত রাখতে হয়। কিন্তু তাদের জামানত শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে এখন বিশেষ সুবিধা চাচ্ছে ব্যাংকটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের তারল্য সংকট এক দিনে তৈরি হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নরসহ হাতেগোনা কিছু মানুষের ভুলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাংক খাত। অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে এত দিন নগদ সহায়তা দিয়ে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এখন বিল বন্ড জামানত রেখে স্বল্পমেয়াদি (এক দিন) ধার করছে দুর্বল ব্যাংকগুলো। এরপরও আমানতকারীদের টাকা তোলার চাপ সামাল দিতে পারছে না তারা। এই সুযোগে তুলনামূলক সবল ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে বহুগুণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১৭ দিন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে রেপোতে ধার দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে নিয়মিত ধার নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নতুন নিয়ম অনুযায়ী এখন সপ্তাহে দুই দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে ধার নিতে পারে ব্যাংকগুলো। এই ১৭ দিনে এক লাখ ৭৪ হাজার ৩৫২ কোটি টাকার ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ধারের মেয়াদ এক থেকে সাত, ১৪, ২৮ ও ১৮০ দিন পর্যন্ত। মেয়াদ অনুযায়ী সুদের হারও ছিল ভিন্ন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.