উদ্বেগজনক হারে শ্রমসংকটে ভুগছে জাপান। এ সমস্যা কাটাতে নতুন পথে হাঁটতে যাচ্ছে তারা। এজন্য সপ্তাহে তিন দিন ছুটির কথা ভাবছে এশিয়ার এ দেশটি। শনিবার (৩১ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সপ্তাহে তিন দিন ছুটি দিয়ে চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালুর কথা ভাবছে জাপান। দেশটিতে উদ্বেগজনক হারে শ্রমসংকট বেড়ে যাওয়ায় তা মোকাবিলায় এমন পথে হাঁটতে যাচ্ছে তারা।
২০২০ সালে জাপানের এসএমবিসি নিক্কো সিকিউরিটিজ ইনক. কর্মীদের সপ্তাহে তিন দিন ছুটির পদ্ধতি চালু করে। তিন দিনের সময়সূচির বিকল্প প্রস্তাব করে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান মিজুহো ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ।
কোম্পানিতে এমন সিদ্ধান্ত আসার পর ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে চার দিনের কর্ম সপ্তাহের প্রস্তাব করা হয়। দেশটির আইনপ্রণেতারাও এটির সমর্থন জানান। কিন্তু পরে তা বাস্তবায়নের গতি ধীর হয়ে যায়।
জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময়ে দেশটির প্রায় ৮ শতাংশ কোম্পানি তাদের কর্মীদের তিন দিন বা তার বেশি ছুটির অনুমতি দেয়। যদিও ৭ শতাংশ কোম্পানি এক দিন বাধ্যতামূলকভাবে ছুটির অনুমতি দেয়।
বর্তমানে ক্রেতা তৈরির আশায় সরকার ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসায় কাজের স্টাইল সংস্কার প্রচারাভিযান চালু করেছে। ‘হাতারাকিকাতা কাইকাকু’ নামের এই প্রচার অভিযানে ওভারটাইম সীমা এবং সবেতন বার্ষিক ছুটিসহ কম ঘণ্টা কাজ এবং অন্যান্য নমনীয় ব্যবস্থাকে প্রচার করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, এমন একটি সমাজ তৈরি করা হবে যেখানে শ্রমিকেরা পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কাজ বেছে নিতে পারবেন। কর্মীদের ভবিষ্যৎ আরও ভালো করতে প্রবৃদ্ধি ও বণ্টনের একটি পুণ্য চক্র তৈরি কথাও এ অভিযানে বলা হয়েছে।
জাপানের সরকারি তথ্যমতে, দেশটিতে বর্তমানে সাত কোটি ৪০ লাখ কর্মক্ষম জনসংখ্যা রয়েছে। ২০৬৫ সালে এ সংখ্যা কমে সাড়ে চার কোটিতে নেমে আসতে পারে।
সম্প্রতি জাপান সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। এতে কারোশি বা ‘অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে মৃত্যু’র কথা বলা হয়েছে। প্রতিবছর এ কারণে জাপানে অন্তত ৫৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে হার্ট অ্যাটাকও রয়েছে।
তিন দিন ছুটির পক্ষের উদ্যোক্তরা বলছেন, এটি শিশুদের লালন পালন, বয়স্কদের পরিচর্যা পেনশনে থাকা অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের এবং আরও বেশি দিন কর্মশক্তিতে থাকার জন্য নমনীয়তা বা অতিরিক্ত আয়ের সন্ধানে থাকা ব্যক্তিদের উৎসাহিত করবে।
দেশটিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফাস্ট রিটেইলিং কোম্পানি, ইউনিক্লো, থিওরি, জে ব্র্যান্ড ও অন্যান্য পোশাক ব্র্যান্ডের মালিক, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি শিওনোগি অ্যান্ড কোম্পানি এবং ইলেকট্রনিকস কোম্পানি রিকো কোম্পানি ও হিটাচি চার দিনের কর্ম সপ্তাহের প্রস্তাব করতে শুরু করেছে।